কারখানায় নিরাপত্তা মূলক নির্দেশাবলী | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

কারখানায় নিরাপত্তা মূলক নির্দেশাবলী: দৈনন্দিন কর্মকান্ডে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা নানা রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারি। কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকির মধ্যে কাজ করলে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের সম্ভাবনাই বেশী থাকে। আর আঘাত প্রাপ্তির ঘটনা যে কোন সময় যে কোন অবস্থাতেই ঘটতে পারে। আঘাতকে সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ করতে না পারলেও যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কমিয়ে আনা যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বেশীরভাগ দূর্ঘটনারই কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং অসতর্কতা।

কারখানায় নিরাপত্তা মূলক নির্দেশাবলী

ছোট বড় সকল আঘাতকেই সমান গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে কারণ-আজকের ছোট সমস্যা ভবিষ্যতে বড় সমস্যার আকার ধারণ করতে পারে। যেকোন কর্মকান্ডে একজন ব্যক্তির নিরাপত্তার (Safety) ব্যাপারে যেমন সবাই সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে থাকে। তেমনিভাবে ফ্যাক্টরীতে কর্মরত সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ব্যাপারে সরকার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ রয়েছে।

কারখানায় নিরাপত্তা মূলক নির্দেশাবলী:

অনেকের ধারণা দুর্ঘটনা (accident) ঘটা স্বাভাবিক। কিন্তু নিরাপত্তা বিশারদগণ এই ধারণার সাথে একমত নন। তাঁরা মনে করেন দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে, যেমন—

(ক) কাজের প্রতি অমনোযোগী

(থ) অযত্ন বা অবহেলা

(গ) যথাযথভাবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা

(ঘ) সাধারণ বুদ্ধির অভাব।

নিম্নলিখিত নিয়মাবলী সঠিকভাবে পালন করলে অতি সহজেই সাধারণ দুর্ঘটনার হাত হতে রেহাই পাওয়া যায়।

‌১। সুস্থ শরীরে কাজ করা।

২। গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করা।

৩। কাজে অবহেলা বা অযত্ন না করা।

8। আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করা।

৫। কাজের সময় কথা না বলা।

৬। একটানা দীর্ঘ সময় কাজ না করা।

৭। শরীর অসুস্থ হলে কাজ না করা।

৮। সকল কাজে উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।

৯। উৎফুল্ল মনে কাজ করা।

১০। এপ্রন পরিধান করে কাজ করা।

১১। কাজের সময় এদিক ওদিক না তাকানো।

১২। কাজের সময় উচ্চস্বরে কথা বলা বা চিৎকার করা অথবা হাসি-ঠাট্টা না করা।

১৩। কাজের প্রয়োজনে চোখে গগলস্ (goggles), হাতে দস্তানা (gloves) এবং মুখাবরণ ব্যবহার করতে হবে।

১৪। কারখানা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

১৫। কারখানায় আলো এবং বাতাসের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

১৬। কারখানার মেঝেতে তৈল, গ্রীজ, মোবিল ইত্যাদি যাতে না থাকে তার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।

১৭। কাজের জায়গায় উপযুক্ত আলো-বাতাস থাকতে হবে এবং ধুলা-বালি মুক্ত হতে হবে।

১৮। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি (fire extinguisher). পানির বালতি, বালুর বালতি ইত্যাদি কর্মশালার যথাযথ স্থানে রাখতে হবে।

১৯। লম্বা চুল, নখ, ঢিলা জামা-কাপড় ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।

প্রত্যেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের তাহার শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য মানসম্মত নিরাপদ কর্মক্ষেত্র এবং স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাভাবিক কর্ম পরিবেশ প্রদান ও উহার রক্ষণাবেক্ষণ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রত্যেক মালিক, তাহার প্রতিষ্ঠানে প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন-

(ক) মানুষের জীবন বা নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ কারখানা ভবন ও ভবনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা, মেঝে, সিঁড়ি এবং যাতায়াত পথ এবং যন্ত্রপাতি বা প্ল্যান্ট বা কাজের সিস্টেম (working system) প্রদান ও রক্ষণাবেক্ষণ;

(খ) কোনো দ্রব্য, পদার্থ, ইত্যাদির ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং বহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা;

(গ) কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও ক্ষেত্রমত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা;

(ঘ) বিনামূল্যে নিরাপত্তা উপকরণ, বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি, বিষাক্ত কেমিক্যাল অথবা বিশেষ কোনো কাজে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য শ্রমিকদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক পোশাক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ;

(ঙ) প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, কারখানা ভবনের প্রত্যেক তলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ, এবং শ্রমিকগণকে এই সকল নিরাপত্তা উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা নোটিশের ব্যবস্থা;

(চ) যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অথবা ভিন্ন অবস্থায় থাকিবার সময় যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা বিধান করা;

(ছ) উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে উত্থিত গ্যাস, ধোঁয়া, বাষ্প বা ধূলা এমন প্রকৃতির বা এমন পরিমাণের হয় যে, উহা বিষ্ফোরিত বা প্রজ্জলিত হইবার সম্ভাবনা থাকে, সেই ক্ষেত্রে উক্তরূপ বিষ্ফোরণ বন্ধ করিবার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা;

(জ) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে পুরুষ এবং মহিলা শ্রমিকগণের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা এবং এইগুলি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্য সম্মত রাখা;

(ঝ) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে, উহাতে কর্মরত সকল শ্রমিকের পান করিবার জন্য উহার কোনো সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ;

(ঞ) সেইফটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ, সেইফটি কমিটি গঠন, কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ধৌতকরণ সুবিধা, ক্যান্টিন, শিশুকক্ষ, ইত্যাদি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা;

(ট) কর্ম পরিচালনায় নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির শারীরিক জখম, বিষাক্রান্ত বা ব্যাধিতে আক্রান্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

আরও পড়ুন:

এককের বিভিন্ন পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

Leave a Comment